লেবেল

নিজেকে এখনও গুছিয়ে নিতে পারিনি

১৪ এপ্রিল, ২০১১

আমার খেলা দেখা


বিশ্বকাপ দেখতে পারিনি , তাই বলে কি বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া সিরিজ মিস করব..!! কখনই না । যতই কষ্ট হোক এই সিরিজটা দেখতেই হবে । বিশ্বকাপ দেখিনি , তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি । কিন্তু টিকেট কিনতে গিয়ে আবারও টের পেলাম বাংলাদেশ আসলেই ক্রিকেটীয় জাতি । প্রথম দুই ম্যাচের টিকেট পেলাম না..!! ভাবতেই পারিনি বিশ্বাকাপ শেষ হওয়ার পর পরই এই সিরিজের উপর মানুষের এত আগ্রহ থাকবে । যাই হোক অনেক কষ্টে অনেক ক্রোশ দূর পথ হেটে টিকেট পেলাম ৫ টা । আমরা ৫ বন্ধু মিলেই খেলা দেখব । আমরা কেটেছিলাম ডে নাইট ম্যাচ । প্রথম দুই ম্যাচ বাংলাদেশ ভাল খেলেনি । তাই টেনশনে ছিলাম আমাদের ডে নাইট ম্যাচ যেন ডে তেই শেষ না হয়ে যায়...!!!


১৩ তারিখ ক্লাশ মিস দিলাম শুধু খেলা দেখব বলে । খেলা শুরু দুপুর ২ টা থেকে , বাসা থেকে বের হলাম ১.৩০ টায়..!! ঢাকার রাস্তার চিরাচরিত জ্যাম পেরিয়ে পৌছে গেলাম স্টেডিয়াম এলাকায় । কিছু খেয়ে , গালে পতাকা একে লাইনে দাঁড়িয়ে ঢুকে গেলাম স্টেডিয়ামে । ঢুকেই অবাক চমৎকৃ্ত হলাম এত সুন্দর স্টেডিয়ামটা দেখে । ভাবতে ভালই লাগে যে বাংলাদেশ আসলে অনেক এগিয়ে গেছে । স্টেডিয়ামটা বিশ্বের যেকোন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সাথে পাল্লা দেয়ার মত । একেবারে সাজানো গোছানো একটা স্টেডিয়াম । তবে ঝামেলা হল আসন পাওয়া নিয়ে । আমাদের আসন ছিল লোয়ার লেভেলে উপরে । কিন্তু ঢুকে দেখি উপরে কোন আসন খালি নাই । অগ্যতা কি আর করা বসে গেলাম অন্য আসনে । ভালই মজা করে খেলা দেখছিলাম । ডিস্টার্ব শুরু হল তখন । যে আসনে আমরা আসন গ্রহণ করেছিলাম তার মালিক এসে হাজির । দিল আমাদের উঠিয়ে , এখন উপায় ?? উপায় একটাই উদ্ধার করতে হবে আমাদের নিজেদের আসন । খুজেও বের করলাম । বসে আছে কয়েকটা যুগল । আহা ইচ্ছে করেনি তাদের ডিস্টার্ব করতে , কিন্তু আমরা ছিলাম নিরুপায় তাই কি আর করা উঠাতেই হল । বসলাম আরাম করে , একেবারে নির্ঝনঝাট ভাবে খেলা দেখছি । এদিকে তো অস্ট্রেলিয়া রান তুলছে একেবারে বুলেট গতিতে । আর বাংলার দামাল ছেলেরা যেন ফিল্ডিং মিসের প্রতিযোগিতা শুরু করছে । হাতে মনে হয় মাখন মাখিয়ে আসছে । তাই বল পিছলে বার বার সীমানা পার হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু তাতে কি , আমরা এসেছি ক্রিকেট দেখতে । তাই চার হলে আমরাও লাফিয়ে উঠেছি , আনন্দ করেছি । দেখতে দেখতেই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ । বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ৩৬২, বাংলাদেশ কি পারবে এই রান অতিক্রম করতে ?? আগের দুই ম্যাচের যে অবস্থা তাতে সম্ভব না । তারপরও আশায় ছিলাম । দেখা যাক কি হয় । তামিম আর ইমরুল কায়েস নেমেই পিটাতে লাগল জনসনকে । একটা করে চার হয় আর দর্শকের চিৎকারে কেঁপে উঠে গোটা স্টেডিয়াম । কিছুক্ষন পর তামিম আউট । নাফিস এসে দেখে শুনে খেলতে লাগল , আর ইমরুল রানের চাকা সচল রাখল । মনে হচ্ছিল জিতেই যাবে বাংলাদেশ । দর্শক অপেক্ষা করছিল ইমরুলের সেঞ্চুরির জন্য । কিন্তু বেচার নার্ভাজ নাইন্টিজে এতই নার্ভাস ছিল যে মামুলি একটা বলেই আউট । সাকিব এরপর নাফিস , সাকিব দুজনেই অবিবেচকের মত শট খেলে আউট । তবে ভাল লাগছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের খেলা । বেচারার প্রতিভা বাংলাদেশ কখনই ব্যবহার করতে পারেনি । তাই রিয়াদ বেশী বল না খেলে ফিফটি মারল । কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংস শেষ ২৯৬/৬ এ । এটাই অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান । ম্যাচের প্রাপ্তি এইটুকুই । এটা বাংলাদেশ কোচ সিডন্সের শেষ ম্যাচ । আফসোস সিডন্সের শেষটা সুন্দর হল না । তবে সিডন্সের কাছে কৃ্তজ্ঞ থাকবে বাংলাদেশ । তার সময়েই বাংলাদেশ এতটা উন্নতি করছে । এই ম্যাচে আমার প্রাপ্তি কতটুকু ?? অনেক । হ্যা অনেক । জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখা তাও অস্ট্রেলিয়ার সাথে । তাই অনেক উত্তেজিত ছিলাম । কত যে চিৎকার করেছি বলে বোঝাতে পারব না । এতদিন যাদের টিভিতে দেখেছি তারা আমার সামনে..!! ভাবলেই কেমন যেন লাগে । ব্রাডম্যানের পর অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং আমার সামনে । কি ভাগ্যবান আমি..!!! মনে হয় না আর কখনও দেখতে পাব পন্টিংকে । মাশরাফি , সাকিব সবাই সামনে..!!! সে এক অদ্ভুত অনুভূতি । বলে আসলে বোঝানো যাবে না । তবে আফসোস প্রাইজ সেরেমনিটা দেখতে পারিনি । কেন জানি পুলিশ তাড়াতাড়ি আমাদের বের করে দিল । মনে হয় দায়িত্ব পালন করে তারা ক্লান্ত । যাই হোক অবশেষে আমার আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার ইচ্ছা পূরণ হল আমি এতেই খুশি..!!!!


সারাদিন খেলা দেখে খুব ক্লান্ত । আমার আনন্দটা সবার সাথে শেয়ার করতেই রাত জেগে এই পোস্ট লেখা । ভাল লাগলে আমার আরও ভাল লাগবে । খুব ঘুম পাচ্ছে , ঘুমাব । রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ । সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা । ভাল থাকবেন । শুভ রাত্রি

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | coupon codes