লেবেল

নিজেকে এখনও গুছিয়ে নিতে পারিনি

৯ জানুয়ারী, ২০১২

প্রসংগ ভারতীয় সিনেমা এবং আমাদের সিনেমা

বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে এখন যে খবরটি একটু বেশি প্রচারিত বা গরম সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে "ভারতীয় সিনেমা" মুক্তি পাওয়া । এক পক্ষের জোর দাবি ভারতীয় সিনেমা মুক্তি দিয়ে সিনেমা হলকে বাচানো(এই পক্ষ হল সিনেমা হল মালিক সমতি) আরেক পক্ষের দাবি হল এতে দেশীয় সিনেমা শিল্প হুমকির মুখে পড়বে(এই পক্ষ সিনেমা তৈরি করা থেকে বিতরণকারী , সর্বোপরী পরিচালক প্রযোজক বৃন্দ) । দুই পক্ষেরই জোড়ালো যুক্তি রয়েছে । অবস্থা এমন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি

আমি চাই না বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা আসুক । কিন্তু এলে কি হবে ? সবার ধারণা এতে ভারতীয় সিনেমার কাছে দেশীয় সিনেমা মার খাবে সোজা বাংলায় বাংলা সিনেমা শেষ । আমি বুঝিনা প্রতিযোগিতাকে আমরা কেন এত ভয় পাই ? প্রতিযোগিতা ছাড়া কোন কিছুরই উন্নয়ন সম্ভব না । কেন ভারতীয় সিনেমা কি প্রতিযোগিতা করে না ? আমার তো মনে হয় বিশ্বের ত্বাবত সিনেমার চেয়ে ভারতীয় সিনেমাই বেশি প্রতিযোগিতা করে । ভারতীয় সিনেমা মানে তো শুধু বলিউডের হিন্দী সিনেমাই না । আছে তামিল , তেলেগু , বাংলা , পাঞ্জাবী , ভোজপুরী সহ আরও অনেক সিনেমা । আর এই সিনেমাগুলো কিন্তু একই সাথে সারা ভারতে প্রতিযোগিতা করছে এবং কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে । শুধু তাই না হিন্দিতে ডাবিং করে এখন হলিউডের মুভিগুলোও ভারতে মুক্তি পাচ্ছে এবং খুব ভাল ব্যবসা করছে । শুধু যদি ভারতীয়রা হিন্দি সিনেমাই দেখত তাহলে তো অন্য ভাষার সিনেমার কোন ইন্ডাস্ট্রিই থাকতো না । কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ভারতীয়রা হিন্দি সিনেমার চেয়ে নিজ ভাষার সিনেমাই বেশি দেখছে । তামিল তেলেগু বা কলকাতায় এখন বেশিরভাগ সিনেমার বাজেটই থাকে ১০ থেকে ১৫ কোটি রূপি । এবং এই সিনেমাগুলো লগ্নিকৃত অর্থ নিজেদের মার্কেট থেকে ঠিকই তুলে আনছে । দক্ষিণে একই শাহরুখের মুভি আর নাগার্জুনার মুভি মুক্তি পেলে সেখানকার মানুষ নাগার্জুনার মুভিই বেশি পছন্দ করছে । শুধু মাত্র হিন্দি সিনেমার জন্য অন্য কোন ভাষার ইন্ডাস্ট্রি বসে যায় নি । কারণ মানুষ সবসময়ই নিজের ভাষার সিনেমা দেখতে পছন্দ করে, যদি তাদেরকে তেমন সিনেমা তৈরি করে দেয়া যায় । কিন্তু আমরা সেটা পারছি কই ?

এখন সিনেমা হল মালিকদের কথা হচ্ছে যেহেতু আমাদের দেশে ভাল সিনেমা হচ্ছে না(কথাটা অবশ্যই ৯৮% সত্য) সেহেতু সিনেমা হলগুলো টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় সিনেমার বিকল্প নেই(অলস মস্তিষ্কের বস্তা পঁচা চিন্তা কারে কয়) । এরা ভুলে গেছে বর্তমানে বাংলা সিনেমার দর্শক কারা ? গার্মেন্টস শ্রমকেরা যাদের অন্য কোন বিনোদন মাধ্যম নেই বলেই সিনেমা দেখে । তাদের কাছে এখনও শাহরুখ খানের চেয়ে শাকিব খানের গ্রহণ যোগ্যতা বেশি । তো তারা কি শাকিব খানের হিরো গিরি বাদ দিয়া শাহরুখ খানের রোমান্টিক সিন দেখতে যাবে নাকি । আরেকটা কথা আজ হয়ত পুরনো সিনেমা মুক্তি দেয়া হচ্ছে , কিন্তু কাল যদি হল মালিকেরা ভারতের সিনেমা ভারতের সাথে একই সাথে এদেশে মুক্তি দিতে দেয়ার ব্যবস্থা করে তখন সিই সিনেমার টিকেট মূল্য অবশ্যই অনেক বেশি হবে যা কিনা এই দর্শকদের নেই । আর সিনেমা হলগুলোর যে অবস্থা তাতে মনে হয় না ভদ্র ফ্যামিলির কেউই ওই সিনেমা দেখতে হলে যাবে । সিনাম হলের নাম শুনলেই তো মানুষ নাক সিটকায় । সেই হিসেবে হল মালিকেরা নিজেদের ব্যার্থতার দায় এড়াতে পারেন না

অন্যদিকে পরিচালকদের , প্রযোজকদের কথা হচ্ছে ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পেলে কেউই আর এদেশের সিনেমা দেখতে চাইবে না । সো আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস । আমার কথা হচ্ছে কেন আপনারা ভয় পান ? আপনাদের কি নিজেদের সামর্থ্যের উপরই কোন বিশ্বাস নেই ? নাকি নিজেদের মাথার(ডাস্টবিনও বলা যায়) সব আবর্জনা দর্শকদের কাছে ফাঁস হয়ে যাবে ? আমাদের পরিচালকেরা শুধু নাম সর্বস্ব আন্দোলন করতেই পারদর্শী । অন্য কাজে ঠনঠনা । সব পরিচালকদেরই দেখা আছে , দেখা আছে তাদের সিনেমা । বাংলাদেশের অনেক নামী দামীই নাম সর্বস্ব পরিচালকই ভারতীয় সিনেমা আগ পিছ করে সিনেমা বানান । গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও আমজাদ হোসেনও এর ব্যাতিক্রম না । তাহলে সেই সিনেমা মানুষ কেন দেখতে যাবে ?

একটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি উন্নতির জন্য কি ৪০ বছর যথেষ্ট সময় নয় ?? আর কত সময় দরকার আমি জানি না । ৪০ বছরে আপনারা কি দিতে পেরেছেন ? শুধু কপি পেস্ট করা সিনেমা ছাড়া । ১৫ দিনে বানানো(রেকর্ডটা মনতাজুর রহমান আকবরের দখলে) একটা সিনেমায় আমরা পাব ? একটা সিনেমা তাড়াহুড়া করে শুধু বানিয়ে মুক্তি দিলেই হয়ে গেল না । শুধু পোস্টার ছাপানো ছাড়া নেই সিনেমার কোন প্রচার , নেই সিনেমা হিট করার কোন সুদূরপ্রসারী চিন্তা । সিনেমা তাহলে আমাদের কাছে পৌছাবে কি করে ।

একসময় আশ্লীলতা সিনেমাকে গ্রাস করেছিল । তা এই অশ্লীল সিনেমা কারা বানাতো ? এফডিসির পরিচালকেরাই তো তাই না ? অভিনয় শিল্পী কারা ছিল এফডিসির শিল্পীরাই তো তাই না ?? কেন সেই শিল্পীরা পারেনি অশ্লীল মুভি বর্জন করতে ? আজকের সাকিব খান সেই সময়ের একজন নামিদামী অশ্লীল শিল্পী ছিলেন । শাকিব খান ময়ূরী জুটি ছিল সেই অশ্লীল সিনেমার হিট জুটি । কেন তিনি তখন সেটা বর্জন করতে পারেন নি ? আমাদের একটা সিনেমার বাজেট যেখানে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা সেখানে খান সাহেব পারিশ্রমিক হিসেবে নেন ৫০ লাখ টাকার উপরে । বাকি টাকা দিয়ে কেমন মুভি বানানো যাবে তা বোঝাই যায় । কেন শাকিব খান কি পারেন না সিনেমার স্বার্থে নিজের পারিশ্রমিক কমাতে । তাহলে আমি কিভাবে বলব সিনেমার এই মানুষগুলো সত্যি সিনেমার প্রতি ডেডিকেটেড !!


অশ্লীলতার যুগে বাংলা সিনেমার একটি পোস্টার


আমি অবশ্যই সিনেমা হলে গিয়ে বাংলাদেশে নির্মিত সিনেমা দেখতে চাই । কিন্তু কষ্টকর হলেও সত্যি অধিকাংশ সিনেমা এমনই যে সেগুলো দেখতেও রুচিতে কিছুটা আঘাত লাগতে বাধ্য । উদ্ভট সাজ সজ্জা আর গল্পের সিনেমা আমি কেন দেখতে যাব ? একই গল্প বার বার দেখতে কেন যাব ? নকল করে সোজা কথায় কপি পেস্ট করা সিনেমা দেখতে কেন যাব ? হ্যা অবশ্যই বলিউডের মুভি কপি হয় কিন্তু আমাদের এখানে তো কেউ খুব ভাল মত কপি করার মতও পরিচালক নেই । কেন অন্য দেশের সিনেমা কপি না করে শুধু ভারতীয় সিনেমাই কপি করা হয় ? এর মানে কি এই যে আমাদের পরিচালকেরা শুধু হিন্দি সিনেমাই দেখেন । যে সিনেমা হলিউড থেকে কপি করে বলিউডে বানানো হয় তারও অনেক পরে বাংলাদেশে কপি করা হয় । যেমনঃ মাই বেস্ট ফ্রেন্ডস ওয়েডিং >> মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যায় >> শুভ বিবাহ(দেবাশিষ বিশ্বাস) । কেন সরাসরি হলিউডি মুভি কপি করতে পারেন না ? এর জন্যই আমার মনে হয় আমাদের পরিচালকেরা আসলেই মেধাশুন্য( ব্যতিক্রমও আছেন তবে সংখ্যায় খুবই কম , সবাই তো আর জহির রায়হান , আলমগীর কবির বা তারেক মাসুদ নন) । পরিচালক কতটা মেধাশুন্য হলে এমন সিনেমা বানাতে পারে নিচের ভিডিওটিই তার প্রমাণ

শাকিব খান বুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার

আমি পকেটের টাকা খরচ করে কার সিনেমা দেখতে যাব ?


এর ?


না এর ??

শাবনূর , অপু বিশ্বাস ? এর চেয়ে চিড়িয়াখানায় গিয়ে হাতি দেখলেও পয়সা উসুল । সত্যি করেই বলছি শাবনূর বা অপু বিশ্বাসের স্থূল শরীর দেখার চেয়ে আমার কাছে ক্যাটরিনার চিকনি চামেলীই বেশি ভাল লাগে

সবশেষে একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে জোকসঃ

গত বছর ঈদে মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের একটি সিনেমার বক্স অফিস খবরাখবর জানতে এক সাংবাদিক গেছেন রাজমনী সিনেমা হলে । হলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলেন দর্শক কেমন ? ম্যানেজারের উত্তর "আসলে আমাদের বেশির ভাগ দর্শকই হচ্ছে গার্মেন্টস কর্মীরা , আর ঈদের ছুটিতে তারা ঢাকার বাইরে আছে , আশা করি তারা ঢাকায় ফিরলেই সিনেমটা হিট করবে"

হা হা হা

পুরো পোস্টে একটা জিনিসই প্রমাণিত হয় "ব্যাথা সারা গায় , ঔষুধ দেব কোথায়" হা হা হা

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | coupon codes