লেবেল

নিজেকে এখনও গুছিয়ে নিতে পারিনি

২৭ জানুয়ারী, ২০১২

সোহানের ভারতীয় পণ্য বর্জনের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা

রাত আটটার বাংলা সংবাদে একটা নিউজ দেখে চমকে উঠল সোহান । সীমান্তে বিএসএফ এক বাংলাদেশী উলংগ করে পিটিয়েছে । কি নৃসংশ । দেখে আতঁকে উঠল সে । এর আগে ফেলানী এবার হাবু শেখ । এভাবে মেনে নেয়া যায় না । এবার কিছু একটা করা দরকার । করতেই হবে । কিছুক্ষণ ভেবে নিজের মাইক্রোম্যাক্স মোবাইলটা হাতে তুলে নিল সোহান । নিজের এয়ারটেল নাম্বার থেকে রাজিব কে ডায়াল করল 0167181**** । রিং হচ্ছে ওয়ান্না বি মাই ছাম্মাক ছাল্লো , নিজের অজান্তেই দুলে উঠল সোহানের শরীর ।

- হ্যালো দোস্ত বল
- নিউজটা দেখেছিস বিএসএফের নির্যাতনের টা ?
- হ্যা দেখলাম , কি নৃসংশ
- আর তো চুপ করে থাকা যায় না , এবার কিছু একটা করা দরকার ।
- কি করতে চাস বল , তোর প্ল্যান কি ? আপাতত যা পারি সেটা হল ভারতীয় পণ্য বর্জন করা । ভারত আমাদের বাজারের অনেকটাই দখল করে আছে । সো পণ্য বর্জন করলে ভারত অনেকটা ধাক্কা খাবে ।
- ওকে চল কাল ফ্রেন্ডসদের সবাইকে ব্যাপারটা ইনফর্ম করি ।
-ওকে কাল সকাল ১০ টায় রবীন্দ্র সরোবরের চলে আসিস ।
- ওকে বাই

ডিনারটা সেরে এসে তড়িঘড়ি করে নিজের ল্যাপটপটা ওপেন করে বসল সোহান । এয়ারটেলের নেট কানেকশন টা লাগিয়ে প্রথমেই ফেছবুকে ঢুকে একটা জ্বালাময়ী ভারত বিরোধী স্ট্যাটাস দিয়ে দিল । আরেকটা গ্রুপ খুলল "আসুন ভারতীয় পণ্য বর্জন করি" গ্রুপে এড করে ফেলল নিজের ফ্রেন্ডলিস্টের সকল বন্ধুকে । সেই সাথে কোলকাতার বন্ধু অমিত কেও ।

হঠাৎ মনে হল সামুর সকল ব্লগারকে একসাথে করা দরকার । ব্লগাররা অনেক ভালো । তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায় ভালো । কানে হেডফোন লাগিয়ে লিখতে বসে গেল সোহান । বাজছে গার্লফ্রেন্ডের অতিপ্রিয় গান "তেরি মেরি মেরি তেরি প্রেমকাহানী হে মুশকিল" । আধঘন্টার চেষ্টায় মুটামুটি ভালোই একটা লেখা দাঁড়িয়ে গেল । পোস্টের করার ১৫ মিনিটেই সমর্থন জানিয়ে ৩৫ কমেন্ট । পোস্ট হিট ।

রাত বাজে প্রায় সাড়ে ১২ টা । কাল রাতে রনবীর কাপুরের ""রকস্টার"" মুভিটা নামিয়েছে সোহান । দেখতে বসে গেল....

ঘুম ভাঙল একটু দেরিতেই । আম্মু ডাকছেন , নাস্তা করার জন্য । তড়িঘড়ি রেডি হয়ে টেবিলে বসে গেল সোহান । স্লাইস রুটিতে জেলি মাখানোই আছে । একটা রুটি নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে শুরু করল । পানি টা মুখে দিয়েই দৌড় । পেছন থেকে মার চিৎকার সোনা গেল , সোহান কমপ্ল্যানটা খেয়ে যা বেটা । এই মুহূর্তে মার কথা শোনার মত টাইম নেই সোহানের । নিজের টিভিএস বাইকটা স্টার্ট করেই রবীন্দ্র সরোবর অভিমুখে চলল সোহান

জ্যামের কারণে ২০ মিনিট লেট । রাজিব আগেই এসে বসে আছে তার হাঙ্ক বাইকের উপর । আহ রাজিব বাইকটা যা কিনছে না , জোসস হইছে ভাবল সোহান

-কিরে কি অবস্থা , কখন এলি ?
- এইতো ২০ মিনিট
- গুড , আর সবাই কই ?
- আসতেছে ।
রুমেলের একটু লেট হবে , ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার থেকে ওর গার্লফ্রেন্ডকে সাথে করে নিয়ে আসবে । সো লেট
- আর বাকিরা ?
- বড়জোর দশ মিনিট লাগবে ওদের
- ওকে
- চল ওয়েট করতে করতে চা বিড়ি খাই
- হুম , চল

গাইস কাল রাতের নিউজটা তো সবাই দেখছিস নাকি । কেমন নির্মম আর নৃসংশ কল্পনা করা যায় না । এর প্রতিবাদ করা দরকার । আর কত নির্যাতন সহ্য করব বল । সবদিক থেকেই ভারত আমাদের শোষণ করছে । প্রথমে ফারাক্কা , এরপর টিপাইমুখ । পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছে না তিস্তায় । ট্রানজিটের নামে গলা টিপে ধরেছে তিতাসের । এভাব আর কত বল । কিছু একটা করবোই এবার ।

- রনিঃ কি করতে চাস বল ?
- আমাদের প্রথম কাজ হল ভারতীয় পণ্য বর্জন করা । এরপর সুযোগ মতন ইন্ডিয়ান দূতাসের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করা । এছাড়া আর কি করব বল ।
- যাই হোক ফেচবুকে প্রচারণা চালানোর জন্য গ্রুপ খুলছি । পোস্ট দিতে শুরু করবি ইন্ডিয়া বিরোধী নিয়ে । আর আমি ব্লগারদের সংগঠিত করার ট্রাই করতেছি । যাই হোক আজ সন্ধ্যার পর শাহবাগ আসিস । পোস্টার করব কিছু
- ওকে
- ওকে

বাই দ্য ওয়ে খেলা দেখছিস আজ ? ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়ার ?
-রাজিব-হুম
- আর বলিস না, এত্ত আশা নিয়ে খেলা দেখতে বসি , খেলা শেষে আশাহত । চিন্তা কর ট্যুরে যাওয়ার আগে কত্ত কথা ইন্ডিয়া হেন করবে , তেন করবে । আর কখন , বাঁশের উপরে আছে ।
- আমি নিজেও এইবার ইন্ডিয়ারে নিয়া আশাবাদী ছিলাম । অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা যা তা , সেখানে ইন্ডিয়ার বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ । অথচ এই ব্যাটিংটাই অস্ট্রেলিয়ার নাদান বোলারদের কাছে কেমনে ভেঙে পড়ল । না দ্রাবিড় না লক্ষণ না শেবাগ । হাহ
- তবে যত যাই বলিস টেন্ডুলাকার কিন্তু মুটামুটি ঠিকই আছে । এরেই বলে জাত ব্যাটসম্যান । সর্বকালের সেরা কি আর এমনিই বলে নাকি

মা আব্বু কোথায় ?
- ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে গেছে , তোর চাচার ভিসাটা আজ ফাইনাল হতে পারে ।
- চাচ্চু মাদ্রাজ যাচ্ছে কবে ?
- ভিসা টা হয়ে গেলেই কয়েকদিনের মধ্যে যাবে
- এবারই কি শেষ নাকি আরও যেতে হবে ?
- ডক্টর তো বলেছিল এবারই শেষ , দেখা যাক কি হয়
- কে কে যাচ্ছে সাথে ?
- তোর চাচী , আর তোর সোহাগ ভাইয়া
- ও
- মা , আমরা আগ্রা যাচ্ছি কবে ?
- তোর আব্বুর ব্যস্ততা টা কমুক এরপর
- মা তোমার মনে আছে আমি যখন দার্জিলিং পড়তাম , প্যারেন্টস ডে তে তোমরা যেতে । আমরা ঘুরতে যেতাম । কত্ত মজাই না হত । ইশ স্কুলের বন্ধুদের খুব মিস করি এখন
- হুম মনে আছে , এখন খেয়ে নে , আমি ঘুমাবো


কিরে রনি আসল না ?
- জ্যামে আছে , বেশিক্ষণ লাগবে না মনে হয়
- পোস্টার দিয়ে কি করবি ?
- মানববন্ধনে লাগতে পারে , তাই আগে ভাগেই বানিয়ে রাখলাম
- হুম
রুমেল তোর নতুন বাইক কবে আসছে ?
- আরে পেমেন্ট তো দিয়ে রাখছি , কিন্তু আজ না কাল এভাবে সময় নিচ্ছে ।
- আর এই পালসারটা কি করবি ?
- চাচাতো ভাইয়ের সাথে ডিল হয়ে আছে , আমার টা এসে গেলে ও এটা নিয়ে নেবে
- কত কমে ছাড়ছিস ?
- ৫০ হাজার
- আরে শালা , ভালো লাভই করলি । এটাও তো অনেকদিন হল । প্রায় একবছর । তাও মাত্র ৫০ কমে ছাড়তেছিস । দারূণ

রুমেল: আচ্ছা আমরা যে প্রতিবাদ করব এর রিঅ্যাকশন কি হবে ভেবে রেখেছিস ?
- ধুর বাল , বাদ দে না , তুই অলটাইম নেগেটিভ ভাবিস । কিচ্ছু হবে না । আর কিছু হলে সেটা পরে দেখা যাবে ।
- দোস্ত আমার দোস্ত আমার যাতে হবে , ৯ টা বেজে গেছে একটু পর মীরাক্কেল শুরু হবে । অপূর্ব রায়ের ভাব টা দেখেছিস , জোসস লাগে আমার কাছে । শেষ দিকে নীতিকথাগুলো যা বলে না সত্যি অনুসরণীয়
- ওকে কাল দেখা হবে গুড নাইট
- গুড নাইট


নাহ আর লিখতে পারছি না । বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে খুব বেশি লেখা যায় না । উপরের লেখাগুলো পুরোটাই মিথ্যে । আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের ৯৫ ভাগ মানুষই সুস্থ প্রতিবাদ করতে জানে । উপরের ঘটনাটা বাকি ৫ ভাগ । প্রতিনিয়ত ইন্ডিয়ান পণ্যের সাথে বসবাসের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান পণ্য বর্জন করার কিছু কৌতুক পরিবেশন করে মাত্র । এটা ঠিক ইন্ডিয়ান পণ্য আমাদের জীবনে খুব আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে । চাইলেই তা ত্যাগ করা যায় না । কিন্তু ধীরে ধীরে ঠিকই ত্যাগ করা সম্ভব । তাই আসুন একবারে না হলেও ধীরে ধীরে নিজেদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলি । অন্তত একটা পণ্য বর্জন করে হলেও ইন্ডিয়ার আগ্রাসনে ধাক্কা দেই


বিঃদ্রঃ এটি আমার অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনাপ্রসূত লেখা , মানুষের বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে নিজের উর্বর মস্তিষ্ককে অনুর্বর হিসেবে প্রমাণ করিবেন না

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | coupon codes