কপালের ভাজ সরিয়ে জ্বলে উঠতে হবে তামিমকে
অনেক নাটকের পর অবশেষে দলে ফিরলেন তামিম ইকবাল । তবে তার আগে নাটক যা হওয়ার হয়ে গেছে । নাটক না বলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক কলংকও বলা যায় । কারণ তামিমকে বাদ দেয়া না দেয়ার জের ধরে পদত্যাগ করে বসেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খান । ক্রিকেটের ইতিহাসেই দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ঘটনায় নির্বাচক পদত্যাগের ঘটনা এই প্রথম । সেই হিসেবে এটি অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য লজ্জাজনক একটি অধ্যায় । আকরাম খান চোখে আঙুল দিয়ে দিলেন বিসিবিতে ক্রিকেটীয় যুক্তি নয় চলে রাজনৈতিক আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা ।
অনেকেই হয়ত বলতে পারে নিজের ভাতিজাকে বাদ দেয়ার কারণেই হয়ত আকরাম খানের পদত্যাগ । কিন্তু আসল ঘটনা হল নির্বাচকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়া , এবং তাদের নির্বাচিত দলে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপই এই পদত্যাগের কারণ । বলা যায় এটি অনেকদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ । নির্বাচকদের নির্বাচন করা দলে কাঁচি চালানো এই প্রথম নয় । জেমি সিডন্সের সময় তিনি রকিবুলকে দলে চাইলেও অনেক সময় বোর্ড থেকেই রকিবুলকে বাদ দেয়া হয়েছিল ।
বিশ্বকাপের সময় গঠন করা হয়েছিল টেকনিক্যাল কমিটি । এই কমিটির কাজ ছিল নির্বাচকদের দেয়া দলে কাঁটছাট করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড়কে ঢুকানো । যে কারণে মোহাম্মদ আশরাফুল গত বিশ্বকাপের দলের সেরা পারফর্মার হয়েও এবার বিশ্বকাপে ঘরের মাঠেই কয়েকটা ম্যাচে দর্শক ছিলেন । বিশ্বের কোন দেশের ক্রিকেট বোর্ডে এমন টেকনিক্যাল কমিটির খোজ পাওয়া যাবে না যারা নির্বাচকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা জন্য গঠিত হয়েছে ।
আবার শোনা যাচ্ছে যে বোর্ডের কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে কোন ক্রিকেটার রাখা হবে না । এর মানে হল বোর্ড পুরোপুরি চলে যাবে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে , কিছু অক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের হাতে । এসব অক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক দেশের ক্রিকেটকে কোথায় নিয়ে যাবে তা একটি শিশুরও খুব ভাল করেই জানা আছে । এই কারণেই বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ্যে ব্যবস্থা নিতে সাবেক ক্রিকেটাররা আদালতে যাবার হুমকি দিয়ে রেখেছে ।
বোর্ড সভাপতির নাতীর অপছন্দ বলে আশরাফুলকে দলে নিতে না করে দেয়া হয়েছে । কি ভয়ংকর কথা । বাংলাদেশের ক্রিকেট কি তাহলে বোর্ড সভাপতির পরিবারের মনোরঞ্জনের জন্য নাকি । বোর্ড থেকে সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না শাহরিয়ার নাফিস , অলক কাপালীর মত সিনিয়র ক্রিকেটার । জিম্বাবুয়ে সফরের ব্যার্থতার বলি হতে স্বরুপ অধিনায়কত্ব বিসর্জন দিতে হয়েছে সাকিবকে , শুধুমাত্র বোর্ড সভাপতির ইচ্ছায় । সাকিবের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এমনও শোনা গিয়েছিল যে সভাপতি সাকিবকে দলে নিষিদ্ধ করেছিলেন । পরে সাকিব নাকি কামালের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেছে ।
নির্বাচকদের কাজে হস্তক্ষেপ এই প্রথম নয় । বলা চলে শুরু থেকেই এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ছিল । বোর্ড কর্মকর্তাদের এমন কর্মকান্ডের ফলেই অকালে ঝরে গেছে আমিনুল ইসলাম বুলবুল , দূর্জয় , হান্নান সরকারের মত ক্রিকেটাররা । বোর্ড কর্মকর্তাদের জন্য একগুয়েমীর জন্য মোহাম্মদ রফিকের গায়ে লেগে গিয়েছিল ওয়ানডে স্পেশালিস্টের লেবেল । সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রতি বোর্ড কর্মকর্তাদের এমন একগুয়েমীর কারণেই দেশের ক্রিকেট দশ বছর আগেও যেখানে ছিল এখনও সেখানেই আছে । শুরুর মতই দলটা এখনও তরুণদেরই রয়ে গেছে । দলে নেই তারুণ্যের সাথে অভিজ্ঞতার মিশেল । যে কারণের ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্য আসছে না । এদেশে সিনিয়র হলেই বিদায়ের ঘন্টি বাজিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয় ।
বিতর্কের আর কোন অবকাশই নেই যে এতসব কিছুর মূলে রয়েছেন বোর্ড সভাপতি মোস্তফা কামাল এমপি । তিনিই আসল নাটের গুরু । বিসিবিতে একছত্র ক্ষমতার অপব্যাবহার করছেন তিনি । একজন বোর্ড সভাপতি একটি দেশের ক্রিকেটের অধিনায়ক । আর সেই অধিনায়ক যখন বিতর্কিত হয়ে পড়েন তখন দেশের ক্রিকেট হয়ে পড়ে অভিভাবক শূন্য , নেমে আসে অশনিসংকেত । আর যখন বোর্ড সভাপতি স্বৈরতন্ত্রিক ব্যাবস্থা প্রচলন করেন তখন বিদ্রোহ আর প্রতিবাদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পরে । আকরাম খানের পদত্যাগ সেই প্রতিবাদেরই বহিঃপ্রকাশ
দেশের ক্রিকেট এখন একজন দক্ষ মাঝি এবং হাল ছাড়া নৌকার মত , যার গন্তব্য অনির্দিষ্ট । আর দুই দিন পরই এশিয়া কাপ । দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন ঘটনা অবশ্যই প্রভাব ফেলবে । এসব ঘটনার পর দলের কাছে সাফল্য প্রত্যাশা অনেক বেশিই হয়ে যায় । দলে ফিরলেও এই ঘটনা তামিমের উপর চাপ হয়ে দেখা দেবে । ব্যাহত করবে তামিমের স্বাভাবিক খেলা । তামিম কি পারবেন সকল চাপ আর বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে নতুন করে চেনাতে । অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই । মাত্রই তো দুটো দিন